Skip navigation
Sidebar -

Advanced search options →

Welcome

Welcome to CEMB forum.
Please login or register. Did you miss your activation email?

Donations

Help keep the Forum going!
Click on Kitty to donate:

Kitty is lost

Recent Posts


New Britain
Today at 05:41 PM

Do humans have needed kno...
Today at 05:47 AM

Iran launches drones
April 13, 2024, 09:56 PM

عيد مبارك للجميع! ^_^
by akay
April 12, 2024, 04:01 PM

Eid-Al-Fitr
by akay
April 12, 2024, 12:06 PM

What's happened to the fo...
April 11, 2024, 01:00 AM

Lights on the way
by akay
February 01, 2024, 12:10 PM

Mock Them and Move on., ...
January 30, 2024, 10:44 AM

Pro Israel or Pro Palesti...
January 29, 2024, 01:53 PM

Pakistan: The Nation.....
January 28, 2024, 02:12 PM

Gaza assault
January 27, 2024, 01:08 PM

Nawal El Saadawi: Egypt's...
January 27, 2024, 12:24 PM

Theme Changer

 Topic: Md.mohiuddin Bangla megathread

 (Read 2205 times)
  • 1« Previous thread | Next thread »
  • Md.mohiuddin Bangla megathread
     OP - April 25, 2017, 06:54 PM

    মুক্তমনা বাংলা ব্লগ
    বিজ্ঞান, যুক্তি, মুক্তচিন্তা
     
    আমাদের ধর্ম, আমাদের ঈশ্বর
    Posted by ভজন সরকার
    (১)
    প্রচলিত যে কোন ধর্ম কিংবা ধর্মবিশ্বাসীদের নিয়ে লেখা ভয়ঙ্কর রকমের ঝুঁকিপূর্ণই শুধু নয় ভয়াবহ বিপদজ্জনকও। এ ভয়াবহ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা শুধু ইদানিং কালের বললে ভুল বলা হবে। এটা তো নির্মম ও কঠিন সত্য যে, ধর্ম প্রচার ও ধর্মীয় প্রভাব বিস্তারের জন্য এ পৃথিবী যতোবার রক্তাক্ত হয়েছে, আর কোন কিছুর জন্য এতো রক্ত ঝরেনি। সেদিক থেকে বললে, আজকের এ পৃথিবীতে আমরা যে সকল প্রচলিত ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাস প্রত্যক্ষ করি, তাদের সকলেরই পেছনের ইতিহাস ভয়াবহ নির্মমতার ইতিহাস। পরিসংখ্যানে হয়ত ব্যাপকতার হেরফের হতে পারে, কিন্তু প্রচলিত কোনো ধর্মই রক্তপাতহীনভাবে এতো দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসেনি।

    বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম “ আগন্তুক” চলচ্চিত্রটি। “আগন্তুক”-কের মূলচরিত্র মনোমোহন মিত্রকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,” আপনি ধর্ম বিশ্বাস করেন?” মনোমোহন মিত্রের উত্তর ছিল এ রকম, “ যা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, আমি তা বিশ্বাস করি না। আর প্রচলিত ধর্ম তা করেই, ফলে আমি ধর্মও বিশ্বাস করি না”। পরক্ষণেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “ আর ঈশ্বর?”। মনোমোহন মিত্র যা বলেছিলেন তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় এ রকম যে, “ এই পৃথিবীতে এতো বিভেদ –এতো বৈষম্য; একদিকে প্রযুক্তির এতো অভাবনীয় উন্নতি-অন্যদিকে অসংখ্য মানুষের এতো কষ্টকর জীবন। এইসব দেখে দেখে পরম করুণাময় ঈশ্বরের প্রতিও বিশ্বাস রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে”।

    যদি মনোমোহন মিত্রের মাধ্যমে আমরা সত্যজিৎ রায়ের ঈশ্বরভাবনাকে মেলাতে চেষ্টা করি তবে সত্যজিৎ রায় যে ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন সেটা বলা যায়। সেই সাথে এটাও বলা যায় যে, তিনি প্রচলিত কোনো ধর্মকেই বিশ্বাস করতেন না। ধর্ম অবিশ্বাসী অথচ ঈশ্বরে বিশ্বাস- কথাটা একটু খটকা লাগে। অনেকে বলেন, সত্যজিতের এ ভাবনা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে পাওয়া। রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রমান তাঁর সাহিত্যের প্রতিটি শাখায়।
    কিন্তু রবীন্দ্রনাথ প্রচলিত কোনো ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। আরও সহজ ক’রে বললে, ধর্মবিশ্বাসের যে প্রচলিত রীতিনীতি, রবীন্দ্রনাথ তার ঘোরবিরোধী ছিলেন।

    এ প্রসংগে, ইংরেজ ধর্মযাজক রেভারেন্ড সি, এফ, এন্ড্রুজ তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন,
    “ গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে একটি আলোচনার বিবরণ জানা যায়। আলোচনার প্রথম বিষয় ছিল মূর্তি; গান্ধী তার সপক্ষে ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সাধারণ মানুষ বলামাত্রই নিজেকে বিমূর্ত চিন্তার স্তরে তুলতে পারে না। আর অনন্তকাল বয়ঃপ্রাপ্ত মানুষের সংগে শিশুর মতো আচরণ করাটা রবীন্দ্রনাথ সহ্য করতে পারেন না। “

    মহাত্মা গান্ধী যেটা বলেছেন, সেটা সাধারণ মানুষের সহজ ও সরল উপায়ে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মাধ্যমে ঈশ্বরের বিমূর্ত চিন্তা – অন্যকথায় বিমূর্ত ঈশ্বরের মূর্ত চিন্তা। আর রবীন্দ্রনাথ যেটা বলেছেন, সেটা ঠিক তার বিপরীত; বিমূর্ত চিন্তার মাধ্যমেই বিমূর্ত ঈশ্বরের চিন্তা। মহাত্মা গান্ধী ও মনীষী রবীন্দ্রনাথের এ বিপরীতমুখী মতই প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের সাথে অলৌকিক ঈশ্বরবিশ্বাসের পার্থক্য। যদিও প্রচলিত সব ধর্মবিশ্বাসের মূলই কিন্তু অলৌকিক ঈশ্বরের সান্নিধ্য –কৃপা কিংবা সন্তুষ্টিলাভ।

    তাই যদি ঈশ্বরে বিশ্বাসটা না থাকে , তবে সব প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাসের বা ধর্মের আচার-রীতিনীতিরও প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ কিংবা সত্যজিতের মতো মানুষেরা ঈশ্বরে বিশ্বাসের উর্ধ্বে উঠতে পারেননি। তাই সাধারণ মানুষ অলৌকিক ঈশ্বরে বিশ্বাসের বিমূর্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসবেন সেটা আশা করা খুব কঠিন।

    মানুষ নিজে যেটা সমাধান করতে পারছেন না কিংবা মানুষ নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত হয়ে যখন নিতান্ত অসহায়, তখন অলৌকিক কেউ তাঁকে সাহায্য করবে, এটা ভাবতে কার না-ভাললাগে। ঈশ্বর কিংবা অলৌকিক শক্তির প্রতি মানুষের বিশ্বাসের মূল কথাই হয়ত এটা। আর এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, মানুষের অসহায়ত্বের প্রতি তথাকথিত সহায়ক ঈশ্বরের এ ধারণাকে পূঁজি ক’রেই প্রচলিত সব ধর্মবিশ্বাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মধ্যে। যদিও কালে কালেএক ঈশ্বর থেকে অন্য ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রতি জোরজবরদস্তি হয়েছে কিন্তু মানুষের দৈবিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস কিন্তু সহজাত।

    (২)
    মানুষ যদি নিজের নিজের মতো ক’রে শুধু অলৌকিক শক্তিতেই বিশ্বাসী থাকতো ( বলাইবাহুল্য সেটাই ছিল এবং সেটাই থাকা উচিতও ছিল),তবে নানা ধর্মের মধ্যে এই যে হানাহানি তার প্রয়োজন ও কার্যকারিতা থাকতো কি? যদি সবাই বিমূর্ত ,মানে যা মূর্ত বা ধরা যায় না, সেটা বিশ্বাস করি, তবে বিবাদের কিছু অবকাশ থাকে কি?

    না, বিষয়টা ঠিক অতোটা সহজ থাকেনি। প্রাচীনকাল থেকেই কিছু বুদ্ধিমান মানুষের নজর এড়ায়নি সাধারণ মানুষের এই অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাসের ধারণাটি। এই মানুষগুলো ছিলেন সে সময় ও কালের প্রেক্ষিতে সমাজের একটু অগ্রসরবুদ্ধি ও প্রতিপত্তির অধিকারী। তাঁরা নানা কৌশলে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছেন; কখনো কখনো জোরজবরদস্তি করেছেন; বলেছেন যে, তাঁরা কিংবা তিনি সেই অলৌকিক শক্তিকে খুশী করার উপায় জেনে গেছেন।

    আমরা যাঁদের অবতার কিংবা নবী-পয়গম্বর ব’লে জানি, তাঁদের কাজ ও জীবনী পর্যালোচনা করলে হয়ত সে রকম একটা ধারণাই পাওয়া যাবে যে, তাঁরা আসলে অলৌকিক ঈশ্বরের সাথে লৌকিক মানুষের একটা সেতুবন্ধনের উপায়মাত্র; অন্য কথায় –মধ্যস্বত্বভোগী। তেমন কোনো প্রচলিত ধর্ম হয়ত পাওয়া যাবে না, যেখানে স্ব-স্ব ঈশ্বরের সাথে সাধারণ মানুষের সরাসরি বা ডাইরেক্ট সংযোগের তেমন ব্যবস্থা আছে।

    প্রসংগেক্রমে, প্রচলিত হিন্দুধর্মের একটু অগ্রসররূপ ব্রাহ্মসমাজের কথা বলা যেতেই পারে। একমাত্র ব্রাহ্মসমাজের মধ্যেই ঈশ্বরের সরাসরি প্রার্থনা করার একটা ব্যবস্থা ছিল। আর ব্রাহ্মসমাজের একদা একনিষ্ঠ উপাসক রবীন্দ্রনাথ তাই নিজেও মূর্তিপূজার বিপক্ষে অবস্থান নিলেও সরাসরি বিমূর্ত উপায়ে বিমূর্ত ঈশ্বরের আরাধনার কথা বলেছেন।

    অথচ ভারতবর্ষের আরেক প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব স্বামী বিবেকানন্দের ঈশ্বর কিন্তু মধ্যস্বত্বের গেঁড়াকলে আটকে গিয়েছিল। তাই অনেকে আশ্চর্য হোন যে, বিবেকানন্দের মতো এতো প্রতিভাবান একজন মানুষ কিভাবে রামকৃষ্ণের মতো কালীভক্ত একজন মূর্তধারণার সাধকের বাতাবরণে বৃত্তাবদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “রামকৃষ্ণের জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য স্বামী বিবেকানন্দের মতো এতো প্রতিভাবান একজনকে শিষ্য করা। আর স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা রামকৃষ্ণের মতো অলৌকিক ভাবধারণার এক সাধকের খপ্পরে আটকে যাওয়া”।

    ঠিক একই কথা বলা যায়, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেও। স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ ছাড়া “নির্বাণ”-লাভ কিংবা স্বয়ং নবীজি ছাড়া আল্লাহর নৈকট্যলাভ শুধু দুরহ নয়,বোধহয় অসম্ভবও।
    (৩)
    একথা অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এখনো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ভিন্ন ভিন্ন রূপে অলৌকিক শক্তিধর ঈশ্বরে বিশ্বাস করে থাকেন। শুধু ঈশ্বরে বিশ্বাসই নয়, জাগতিক সুখ-সমৃদ্ধি-সমাধান-সমর্থনের জন্যে ঈশ্বরের কৃপা লাভ করতে চান। এ জগতে তো বটেই মৃত্যুর পরে আরও বেশী সুখী হতে চান। এ পৃথিবীর অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চান মৃত্যুর পরে।এক কথায় সুখের সাগরে অনন্তকাল ভাসতে চান। আর তার জন্যে উপায় যার যার ঈশ্বরের কৃপা পাওয়া। ঈশ্বরের কৃপা লাভের জন্যে যুক্তি-তর্ক এমনকি কান্ডজ্ঞান বিসর্জন দিতেও মানুষের কমতি নেই।

    আগেই বলেছি, কিছু মানুষ নিজের কিংবা নিজেদের মতো ক’রে ঈশ্বরতুষ্টির উপায় বাতলে দিয়ে গেছেন সাধারণের কাছে; যার অন্য নাম প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস। কেউ কেউ বা কোনো কোনো ধর্মবিশ্বাসীরা হয়ত সেই অতীতের ঈশ্বরতুষ্টির উপায় একটু সংস্কার ক’রেছেন। ঈশ্বরের বিমূর্ত ধারণাকে দর্শন কিংবা যুক্তির প্রলেপে মুড়ে দেয়ার চেষ্টা করে ধর্মবিশ্বাসের বিধিনিষেধের বাতাবরণকে একটু আলগা করেছেন। আর কেউ এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন, আদিম বা মধ্যযুগের সেই বাতলে দেয়া ঈশ্বরতুষ্টির রীতি-নীতি বা বিধিবিধানকে।

    আমরা চাই বা না-চাই, বিশ্বাস করি বা না-করি এ পৃথিবী থেকে অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস, যাকে আমরা ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান, গড –যা বলি না কেন, সেখানে থেকে এতো সহজে মুক্তি নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-যুক্তির উৎকর্ষ সত্বেও মানুষের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে, থাকবে কিছু অজানা-অচেনা-অসহায়ত্ব। সেই সাথে রাজনীতি, বৈষম্য –বিভাজন কিংবা অন্যকে শোষণ করার ইচ্ছে তো আছেই। আর এ সবের জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস কখনো আসবে সহজাত হিসেবে আবার কখনো ধর্মবিশ্বাসকে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহারের মাধ্যমে।

    তবে একথাও সত্য যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষের মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা যতো বাড়বে, অলৌকিক শক্তিধর ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান, গড-এর প্রতি মানুষের বিশ্বাসও ততো কমবে। আর ঈশ্বরের অস্তিত্বে আস্থাহীন মানুষের ঈশ্বরতুষ্টির সাধনা,যার প্রচলিত নাম ধর্মবিশ্বাস, সে সবের প্রয়োজনও আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যাবে।


    “সংবিধানে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা বজায় রাখাই জরুরি” - তাতে কি জাতি দুর্নীতিমুক্ত এবং সৎ হবে?
    লিখেছেনঃ কফিল কাঙ্গাল এক সময়ে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নিগৃহীত, শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত ও কালো বানর বলে খ্যাত নিগ্রো পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত সাহিত্যিক রিচার্ড রাইটের একটি উক্তি দিয়ে শুরু করছি “দিনের আলোয় ওরা অন্ধকারের সাক্ষাৎ পায় এবং ভর দুপুরে হাতড়ে বেড়ায় যেন গভীর রাত।” জাতি হিসেবে আমরা ধার্মিক এতে কোনো সন্দেহ…
    তখন ও এখন, পর্ব ২৭
       তখন  ও এখন গীতা দাস (২৭)   ‘হিন্দুর দাড়ি মুসলমানের নারী গাং পাড়ের বাড়ি এ তিনটির কোন স্থায়িত্ব নেই।’  প্রচলিত গ্রামীন ধারণা। নিঃসন্দেহে বির্তকিত কথা। হিন্দু ব্যক্তিও দাড়ি নিশ্চয়ই রাখতে পারেন। বিশেষ করে ‘মুসলমানের নারী’র স্থায়ীত্ব নেই মানে সাম্প্রদায়িক কথা। তবে ছোটবেলায় মুসলমানের নারী শব্দটি নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল…
    মৌলবাদের জন্ম ও বিকাশ-রুখতে হবে কিভাবে
    ( নিবন্ধটি ২০০৬ ইং সালের ১২ ই মার্চ, দৈনিক সংবাদে এবং তৎপূর্বে মুক্তমনার পূরানো সাইটে এবং ২০০৭ ইং সালের বইমেলা উপলক্ষ্যে লেখকের প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক পুস্তিকায় প্রকাশিত। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিবন্ধটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় অপরিবর্তিত অবস্থায় পুন:প্রকাশ করলাম। )

    No religion no war, No religious justification no discrimination.Free thinking & humanism is the way forward for global peace establishment.One law for all human being.
  • Md.mohiuddin Bangla megathread
     Reply #1 - May 03, 2017, 07:05 PM

    আমি, আমরা, হেফাজতে-ইসলামি বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শফি হুজুর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতির জ্ঞান সম্পন্ন প্রত্যেকটি মানুষ জানি যে- অধুনা বাংলাদেশে ইসলাম প্রেম, নবি মুহাম্মদের কথিত ‘অবমাননা’, ইসলাম ধর্ম রক্ষার যে জিগির উঠেছে তার সবকিছুই ‘বাখওয়াজ’। আসল কথা হল সাধারণ জনগণকে ধর্মরক্ষার মিথ্যে জিগির তুলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা নিজেদের ক্ষমতার মসনদে আসীন করবার পথকে সুগম করার হীন কৌশলমাত্র। বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের ‘গণতান্ত্রিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে বাংলাদেশের ৮৯% মুসলমানকে ‘জোটবদ্ধ’ করা চাই। এই জোটবদ্ধ করার সহজ উপায় ১১% লোকদের ধর্ম সন্দেহ, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো। ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে ইসলাম ধর্ম হল তুরুপের তাস।

    বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ও সেক্যুলার হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। আওয়ামী লীগ বহির্বিশ্বে নিজেদের ‘ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী’ একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে জাহির করার বহুমাত্রিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই সরকার ও এর প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্টরা আদৌ জানে না ধর্মীয় মৌলবাদ কী জিনিস।

    আলোচনার প্রারম্ভে প্রাসঙ্গিকভাবেই জানা প্রয়োজন ধর্মীয় মৌলবাদ কী? সকল ধর্মীয় মৌলবাদ হল বাস্তব বর্জিত, যুক্তিহীন, বৈজ্ঞানিক ভাবনা-চিন্তাহীন, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, বিবর্তনের জ্ঞানহীন এক অসুস্থ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মতবাদ। ধর্মীয় মৌলবাদীরা বর্তমানকালে জীবনধারণ করে থাকে, বর্তমানকালের বিজ্ঞান ও সভ্যতার সকল সুযোগ সুবিধাদি ভোগ করে; অথচ সহস্রাব্দকাল আগের কথিত ধর্মীয় সামাজিক আচারাদি যা বর্তমানকালে পুরোপুরি অচল, সেই অচল সমাজ ব্যবস্থাই চালু করতে চায়। সহস্রাব্দকাল আগের প্রাচীন রীতি-নীতি ধর্মবিশ্বাস যে কোন প্রক্রিয়ায় (খুন করে হলেও) সকল মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চায়। এইসব ধর্মীয় মৌলবাদীরা মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত আচার আচরণের স্বাধীনতা কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কোনও মূল্য দিতে রাজি নয়। যতো গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, যা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে নেই, তার অস্তিত্বই এরা স্বীকার করে না। এদের মতে- ‘সবকিছুই ধর্মগ্রন্থে রয়েছে’। আর ধর্মগ্রন্থে যা নেই মানুষের জীবনে তার দরকারও নাই। মুসলিম ধর্মীয় মৌলবাদীদের উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী খিলাফত শাসন প্রতিষ্ঠা করা।যেখানে শরিয়াহ আইনের অধীনে পুরো রাষ্ট্রকাঠামো চলবে। যা আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্র বলে পরিচিত রাষ্ট্রকাঠামোর ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত ও সাংঘর্ষিক।

    ধর্ম নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয়দানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত প্রায় ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন। অথচ এই সরকারের আমলেই বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। কেবলমাত্র গত বছরেই প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে ৬ জন ব্লগারকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে সিরিয়ালি কাউকে খুন করার নজির গণতান্ত্রিক কোন দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্লাসফেমির অভিযোগে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে খুন করা একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্রগুলোতেই সম্ভব। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশেই আজ এটা সম্ভব হচ্ছে কেবলমাত্র রাজনৈতিক আপসকামীতার কারণে। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল থেকে শুরু করে সংবাদ মিডিয়া, লেখক বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে অধিকাংশই অবিশ্বাসীদের সংস্রব এড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকছেন। আর এই সুযোগটাই ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী কাজে লাগাচ্ছেন। জঙ্গিরা একের পর এক মুক্তচিন্তার লেখকদের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে হত্যা করলেও তারা কেউই কার্যকরী প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ করছেন না, সরকারও সত্যিকারভাবে তাদের দমনের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। ফলে জঙ্গিরা দিন দিন আরও সাহসী হয়ে উঠছে। অবস্থা এখন এমনই দাঁড়িয়েছে যে, মৌলবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যারাই মুখ খুলছেন তারাই ‘নাস্তিক’ উপাধি পাচ্ছেন। আর বাংলাদেশে ‘নাস্তিক’ উপাধি পাওয়াকে অধিকাংশ মানুষ ঘৃণার চোখে দেখেন। সমাজে মানুষের বড় একটি অংশ বিশ্বাস নাস্তিকদের হত্যা করা অন্যায় কিছু নয়। নাস্তিকদের সাথে সরকারের কোন সংশ্লেষ নেই প্রমাণ করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও স্বয়ং নাস্তিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর নিকট বক্তব্য দিয়েছেন, “আমরা (আওয়ামী লীগ) নাস্তিক হিসেবে পরিচিত হতে চাই না।”  (সূত্র- Dhaka Tribune.com) জনাব জয়ের উপরোক্ত বক্তব্যই বাংলাদেশ সরকারে সামগ্রিকচিত্র প্রতিভাত করে।

    মুক্তচিন্তা, ধর্মীয় সমালোচনা ও স্বাধীন মত প্রকাশ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির অসংখ্য সুস্পষ্ট প্রমাণ উল্লেখ করা যায়। পুলিসের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মুক্তচিন্তার লেখকদের কঠোরভাষায় হুমকি দিয়ে সাবধান করে বলেন- “আমরা যেন সীমা লঙ্ঘন না করি। এমন কিছু লেখা উচিত নয়, যেখানে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে, বিশ্বাসে আঘাত আনে।” এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন- ” কোনও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে কেউ বক্তব্য দিলে তা সহ্য করা হবে না।”

    বাংলাদেশে আগেও নাস্তিকতা চর্চা ছিল, কিন্তু তখন এই অপরাধে নাস্তিকদের খুন করার ট্রেন্ড ছিল না। এই ট্রেন্ড চালু হয়েছে বিশ্বব্যাপী ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থানের পর থেকেই। ১৯৭৪ সালে দাউদ হায়দারকে কবিতার জন্যে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর ১৯৯১-১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি বই মেলায় লেখক তসলিমা নাসরিনের বই উঠিয়ে নেওয়া হয়, তাঁর জন্য মেলায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে তার বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি ও ফাঁসির দাবি তোলে ইসলামি রাজনৈতিক দলসমূহ। তাঁর ফাঁসির দাবিতে সমগ্র দেশে অসংখ্য মামলা রুজু হয়, সরকার তাঁর বিচারেরও চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি সেসময় গোপনে দেশত্যাগ করায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর নাস্তিক ও মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে সমগ্র দেশে ড. আহমদ শরীফের ফাঁসি দাবি করে আন্দোলন গড়ে তোলে ইসলামি রাজনৈতিক দল। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন হরকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামী মুক্তমনা কবি শামসুর রাহমানকে হত্যার চেষ্টা চালালেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। কয়েকবছর পরে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাংলা একাডেমি বই মেলায় অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপরে নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়। এই হামলা ও আক্রমণের ফলে অল্প কিছুদিন পরই তাঁর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের সরকার ড. আজাদ হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত ও বিচার করেনি। এরপর থেকেই মূলত বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার লেখকদের ওপর হামলার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। যা রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন ও রাজনীতিকদের প্রচ্ছন্ন সহায়তা কিংবা নীরবতার কারণেই ক্রমশ বিশাল আকার ধারণ করেছে।

    ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশে ইসলামবাদীদের দ্বারা এমন কিছু গুপ্ত হামলা ও হত্যা সংঘটিত হচ্ছে যেগুলোর ধরন এবং টার্গেট এবং প্রকাশ্যে তাদের ঘোষণা দেখে এর পিছনের ইসলামী উৎস ও সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। এবং এটাও পরিষ্কার হয় যে, খুনি বা হামলাকারীদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু মুক্তচিন্তার লেখক, ব্লগার ও প্রকাশক এবং অতঃপর মূল ইসলামী ধারা বিচ্যুত মুসলমান এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী এইসব হত্যা, আক্রমণ ও হামলার পিছনে যুক্ত থাকলেও এযাবৎ সংঘটিত কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার এ দেশে হয়নি।

    গত বছর (২০১৫) সাল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর সবচেয়ে উর্বর সময়। ২৬ ফেব্রু-য়ারি ২০১৫ সালে প্রথম হত্যার শিকার হন ‘মুক্তমনা’ ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, বিজ্ঞান লেখক, ব্লগার ও গবেষক ড. অভিজিৎ রায়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত একুশে বইমেলায় তাঁর লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে অভিজিৎ রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে প্রকাশ্য জনসাধারণের সামনেই হত্যাকারীরা ধারালো চাপাতি দিয়ে তাঁর মাথা ও ঘাড়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটাই ঘটেছিল শত শত মানুষের উপস্থিতিতে, এবং ঘটনাস্থলের অনতিদূরেই পুলিশ অবস্থান করলেও অভিজিতের প্রাণ রক্ষার্থে পুলিশ কোন সহায়তা করেনি। এই ঘটনার সময় তাঁর সাথে বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক, মুক্তমনা ব্লগার, অভিজিতের স্ত্রী, রাফেদা আহমেদ বন্যাও মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন। বন্যা আহমেদকে সাধারণ লোকজন হসপিটালে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা করাতে উনি প্রাণে বেঁচে যান।

    এরপর ধারাবাহিকভাবে এইসব ইসলামি জঙ্গিদের হাতে ২০১৫ সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখ অনলাইন একটিভিস্ট ও ব্লগার ওয়শিকুর রহমান বাবু তার নিজের বাসার সামনেই প্রকাশ্যদিবালোকে খুন হন। এরপর অফিসে যাবার পথে সকাল বেলা নিজ বাসার সামনেই অনন্ত বিজয় দাসকে কুপিয়ে খুন করে মে মাসের ১২ তারিখে। এবং ৭ আগস্ট নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নীলয় নীল ওরফে এনসি নীল নিজ বাসভবনে খুন হন। গত বছরের সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল মুক্তচিন্তার লেখককের বই প্রকাশক দীপন হত্যা। ৩১ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে তাঁকে তাঁর প্রকাশনা সংস্থার অফিসেই জবাই করে খুন করে যায় ইসলামি জঙ্গিরা। একইদিন মুক্তচিন্তার লেখকদের বই প্রকাশক, লেখক ও কবি আহমেদুর রশিদ টুটুল, ব্লগার ও লেখক রণদীপম বসু এবং কবি তারেক রহিমের ওপরও ইসলামি জঙ্গিরা হত্যা করার উদ্দেশে চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এঁরা ৩ জনকে দ্রুত হসপিটালে নিলে সৌভাগ্যক্রমে তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। এরা ৩ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সল আরেফিন দীপন প্রাণে বাঁচতে পারেন নি।

    একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, ধারাবাহিকভাবে লেখক, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের ওপর এই আক্রমণের সূচনা হয়েছে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দারকে হত্যার মধ্য দিয়ে। যিনি অনলাইন প্লাটফর্মে ‘থাবা বাবা’ নামে লেখালেখি করতেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি এবং ফাঁসীর দাবীতে শাহবাগ চত্বরে ঐতিহাসিক জনবিস্ফোরণের পরেই এই হত্যাকাণ্ডগুলো শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধাপরাধীদের প্রায় সকলেই ইসলামি মৌলবাদী রাজনীতি ও সাধারণ মানুষ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এই যুদ্ধাপরাধীরা ছিল প্রধানত জামায়াতে ইসলামি নামক সংগঠনের নেতা-কর্মী। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের জাতিদ্রোহী ও দেশদ্রোহী ভূমিকা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের কঠোর শাস্তির দাবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ শাহবাগে জমায়েত হন। এবং এই জমায়েত ও বিক্ষোভের পিছনে প্রকাশ্যে না এলেও পিছন থেকে ভূমিকা রেখেছেন মুক্তচিন্তার লেখক ও ব্লগারদের বড় একটি অংশ। বস্তুত এই আন্দো-লনের শুরুটা হয়েছিল ব্লগ ও ফেসবুকে অনলাইন একটিভিস্টদের নিজেদের মধ্যে ইনবক্স ও পাবলিক পোস্টে যোগা-যোগের মাধ্যমে। বাংলাদেশের আন্দোলনে যা সম্পূর্ণ নূতন ধারার সংযোজন ঘটায়। কারণ ব্লগ ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা ঘটে। যা এই দেশে অতীতে কখনও ঘটেনি। এই আন্দো-লনের শুরুটা হয় তখনই যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুরুতর যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে আদালত মৃত্যু-দণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। যা ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টরা প্রত্যাখ্যান করে সে রায়কে ‘প্রহসনমূলক রায়’ হিসেবে অভিহিত করে সরকারের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের আপসের অভিযোগ করে। পরবর্তীতে শাহবাগ আন্দোলনের চাপে কাদের মোল্লার রায় রিভিউ করে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

    ব্লগার ও অনলাইন একটিভিস্টদের শাহবাগ আন্দোলনের সময় জামায়াতে ইসলামী এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি সভাপতি খালেদা জিয়াও ব্লগারদের আন্দোলনকে ‘নাস্তিকদের আন্দোলন’ হিসাবে আখ্যায়িত করে তার বিরোধিতা করেন। এভাবে ব্লগাররা রাজনৈতিকভাবে সমগ্র দেশের প্রশাসন ও জনগণের নিকট ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেলেন। তাছাড়া ইসলামি দল ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ লোকদের নিকট ‘নাস্তিক’ শব্দটি খুবই ঘৃণিত ও অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে ইসলামি গোষ্ঠী সবসময়ই নাস্তিকদের ব্লাসফেমি আইনে ফাঁসি দাবি করে আসছে। এমনকি তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেছে সরকার যদি নাস্তিকদের ফাঁসি না দেয় তাহলে তারা এইসব নাস্তিক ব্লগারদের জবাই করে খুন করবে। এ লক্ষে ২০১৩ সালেই তারা ৮৪ জন নাস্তিক ব্লগারের একটি তালিকা সারাদেশে প্রকাশ করে। এই তালিকা ধরে একে একে সবাইকে খুন করা হবে বলেও এইসব ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী বারবার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। গতবছর খুন হওয়া ৫ জন ব্লগার-লেখকদের মধ্যে ৪ জনই ৮৪ তালিকাভুক্ত ব্লগার। গুরুতর আহতদের সংখ্যা বাদ দিলেও গত আড়াই বছরে বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিদের হাতে খুন হওয়া মুক্ত-চিন্তার ব্লগার-লেখকদের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত ৭ জন।

    এটা পরিষ্কার যে, যাঁরা নিহত হয়েছেন তারা বেশিরভাগই ধর্মে অবিশ্বাসী কিংবা নাস্তিক হিসাবে পরিচিত। নিহতরা সকলেই নিজেদেরকে যুক্তিবাদী ও নিরীশ্বরবাদী হিসাবে দাবী করতেন এবং সকল প্রকার ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাস, গোঁড়ামি, মানবাতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের তীক্ষ্ণধার লেখালেখিই ছিল তাদের খুন হবার পিছনের কারণ। এ কারণেই জিহাদি তথা ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী কাপুরুষোচিতভাবে এইসব গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ জিহাদি বা ইসলামী জঙ্গি রাজনীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও খুব শক্ত যোগসাজশ রয়েছে

    No religion no war, No religious justification no discrimination.Free thinking & humanism is the way forward for global peace establishment.One law for all human being.
  • অনন্ত বাড়ি আছো?
     Reply #2 - May 11, 2017, 09:59 PM

    ভারতের বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে '৯২ পরবর্তী ভারতীয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ঢেউ আছড়ে পড়ে বাংলাদেশেও। হাজার হাজার হিন্দুরা বাস্তুভিটা হারা হোন। অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্তরা দেশ ত্যাগ করে ভারতে পাড়ি জমান। এর রেশ সিলেটে চাক্ষুষ তেমন না পরলেও ছোটোখাটো হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছিলো। সিলেটের অনন্ত বিজয়দের বাসার কাছেই তাঁদের আত্মীয়-জ্ঞাতিদের বাসায়ও এক-দুই বার হামলা হয়েছিলো। হামলাকারীরা অনেকেই ছিলো পরিচিত। চেনামুখ। প্রতিদিন দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও প্রায়ই একে অন্যের মুখোমুখি হতেন, এমন লোকজন-ই হামলায় অংশ নিয়েছিলো। সে সময় নিহত, আহত বা বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি খুব একটা হয় নি। অনন্ত বিজয় সে সময় হয়তো প্রাইমারি স্কুলে পড়তেন। ভয়ে-আতঙ্কে তাঁরা চার ভাই-বোনরা দিন সাতেক স্কুলেও যান নি। দরকার না পরলে বাসা থেকেও খুব একটা বের হতেন না। মা-বাবা পারতপক্ষে বের হতে দিতেন না। চোখে চোখে রাখতেন তাঁদের। অনন্ত বিজয় ছাড়া আজ অন্য ভাই-বোনদের কি আজও তাঁর মা চোখে চোখে রাখেন? নাকি কাঁদতে কাঁদতে আজ আর চোখেও খুব একটা ভালো দেখেন না...? ভাই-বোনেরা সর্বকনিষ্ঠ, তাঁদের আদরের রিপন এতো দিন বাড়ি ফিরে না দেখে কি প্রতীক্ষায় থাকেন? মৃত্যুর আগে আগেও কি বাবা রবীন্দ্র দাশ সবচেয়ে আদরের রিপনকে খুঁজেন নি?
    ডানপিটে অনন্ত বিজয় তারপরেও কোনো এক ফাঁকফোকরে গলে হয়তো বেড়িয়ে যেতেন। বাসা থেকে মিনিট খানেকের হাঁটা পথ পেরোলেই বেশ বড় দিঘিটা। দিঘির পাড়ে তাঁর খেলার বন্ধুরা তখনও তাঁর জন্য অপেক্ষায় থাকতো। এতো কিছুর পরও সেই বন্ধুরাই রিপনকে পেলে সব ভুলে খেলায় মেতে উঠতো। বন্ধুরা আজও সুস্থ সবল আছেন। অনেকেই নিজ নিজ ক্যারিয়ার, চাকুরিবাকুরি নিয়ে ব্যস্ত। কেউবা সুন্দর ঘর-সংসারও করছেন। সবই ঠিকঠাক আছে। দিব্যি আছে দিঘিটাও। সাঁতার না জানা অন্তত বিজয় দিঘির অথৈ জলে ভরসা ছিলো। হয়তো দিঘিরও ভরসা ছিলো অনন্তের প্রতি! ভরসা ছিল না শুধু ভয়াল ঘাতক ইসলামি জঙ্গিদের! এবারের ঘন ভারি বৃষ্টি, বর্ষাময় জলে হয়তোবা উপছে পড়েছে দিঘিটা। জল গড়িয়ে গড়িয়ে খাল নদীনালা পেরিয়ে সাগরে গিয়ে হয়তো সেই জল মিলেমিশে যাচ্ছে। রিপন নাম্নী অনন্ত বিজয়ের শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের স্মৃতি ধুয়ে মুছে দিতে কী পারবে এই বহুপথ গড়ানো এঁদোজল?
    অনন্ত বিজয় ব্লু-বার্ড স্কুলে পড়াকালীন সেবা প্রকাশনীর বইয়ের সাথে পরিচিত। বড় ভাইও ছিলেন সেইরকম বইয়ের পোঁকা। বিশেষ করে তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু'র একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন তিনি। তাঁর পড়ার অভ্যেস পারিবারিক ভাবেই ছিলো। স্কুলে কিছু বন্ধু-বান্ধবও জুটে গিয়েছিলো সেইরকম। পড়ুয়া। কৈশোরে অনন্ত বিজয়ের তিন গোয়েন্দা খুব প্রিয় ছিলো। সে হিসেবে গোয়েন্দাদের মধ্যে রবীন, মুসা অন্য যে কেউ হলেও কিশোর পাশা ছিলেন অনন্ত বিজয় নিজে! বন্ধুরা প্রথমে ঘাইঘুই করলেও পরে কিশোর পাশারুপী অনন্ত বিজয়কে তাঁর আনুগত্যকে মেনে নেয়। এডভেঞ্চার প্রিয় অনন্তকে পেয়ে তাঁরাও তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। অনন্ত বিজয়ের মতো তাঁর বন্ধুরাও তিন গোয়েন্দার ভীষণ ভক্ত ছিলেন। ক্লাসে, টিফিনের ফাঁকে তাঁঁর বন্ধুদের এক মাত্র কাজ ছিলো রহস্য খোঁজা! রহস্যকাহিনীর পোঁকা অনন্তের মৃত্যুটা প্রকাশ্যে, সকাল বেলায় প্রকাশ্যে দিনের আলোয় হয়েছিলো। রহস্য-মৃত্যু হয় নি। রহস্যসন্ধানী অনন্ত দিনের আলোয় ঘাতকদের এলোপাতাড়ি চাপাতির আঘাতে মৃত্যু হয়। মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্য মৃত্যুর খানিকটা প্রস্তুতিও কী নিয়ে নিয়েছিলেন কিশোর পাশারুপী অনন্ত বিজয় দাশ?
    মদনমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞানে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। প্রথম বিভাগে। মাধ্যমিকেও প্রথম বিভাগ। বিজ্ঞান। মদনমোহন কলেজ তখন ছাত্র রাজনীতির দূর্বৃত্তদের দখলে। ছাত্র শিবির, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ সমানে সমান। কেউ থেকে কেউ কম নয়। যাকে বলে আওয়ামি শেষ যমানা আর বিএনপি'র শুরুর দিকের সময়কার ছাত্র তিনি। বিগত শতক শেষ আর নতুন শতকের শুরুর দিকের ছাত্র তিনি। সেই উত্তাল সময়ে অনন্ত বিজয় মদনমোহন কলেজের ছাত্র। ক্যাম্পাস তুলনায় ছোটো ও গিঞ্জি। পিলপিল করছে ছাত্রছাত্রীরা। এর মধ্যে ছাত্র রাজনীতির অন্তর্ঘাত কোন্দল মারামারিতে ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। যেকোনো সময় অস্ত্রের ঝনঝনানি, অস্ত্র প্রদর্শন চলে। পড়াশুনোর থেকে অস্ত্রের ঝনঝনানি বেশি চলে। অন্তর্ঘাতী সংঘর্ষে পড়ে নিরীহ ছাত্ররা লাশ হয়। দলীয় ছাত্র, অছাত্রদের লাশ পড়ে। সেই মরণ্মোখ সময়েও অনন্ত বিজয় মৃত্যুকে ঝাঁটা মেরে জীবনের স্বপ্নজাল বুনে চলেছিলেন! প্রিয় মদনমোহন ক্যাম্পাস, ক্লাসমেট, রাজনৈতিক দলাদলি ও প্রিয় শিক্ষকেরা আজও অনেকেই সুস্থ আছেন। দিব্যি আছেন। শুধু অনন্ত বিজয় আর নেই!
    ভারতে গিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিলো। নানান কারণে হয়ে উঠেনি আর। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য দু'বোনের মতো তিনিও পড়ার সুযোগ পান। বিষয় পান সমাজকর্ম। ইচ্ছে ছিলো না পড়ার। শেষমেশ বাধ্য হয়ে, মনের বিরুদ্ধে গিয়ে পড়েন। একই সাথে প্রিয় মানুষ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। বড়বোনের শিক্ষক। সে হিসেবে মাঝেমধ্যে সুযোগ ছিলো দেখা সাক্ষাতের। এসব মিলিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মন্দ হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও নানান কাজেকর্মে সময় ভালোই কাটছিলো। চমৎকার কিছু ক্লাসমেট, বন্ধু-সুহ্নদ পেয়েছিলেন। মদিনা মার্কেট, হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিষয়ভিত্তিক ফিল্ডওয়ার্ক করতে করতে সমাজকর্ম বিষয়কে কখন যে নিজের করে নিয়েছিলেন তা আর টের পান নি। বছর বছর পিকনিক হতো তাঁর বিভাগের। এসবের অগ্রভাগে থেকে দ্বায়িত্ব পালন করা থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সবই হাসিমুখে করতেন। এছাড়াও সময়ে অসময়ে বন্ধুদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগীতা করা এসবের মধ্যেই বিষয়ভিত্তিক পড়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সবই কেমন করে জানি প্রিয় হয়ে যায়। শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস, ক্লাসমেট, বন্ধুরা, প্রিয় সমাজকর্ম বিভাগ ও প্রিয় শিক্ষকেরা সবই আজও প্রায় একই আছে। বন্ধুরা যার যার পেশায় ব্যস্ত। অনেকেই দেশ ও দেশের বাইরে। শিক্ষকেরাও রোজকার মতো করে পড়াচ্ছেন। সেই আলোর মিছিলে নেই শুধু অনন্ত! আচ্ছা, তাঁর শিক্ষকেরা কি ভালো করে অনন্ত বিজয়ের মুখ মনে করতে পারেন? একটু লাজুক, হাসিমাখা মুখটা কি মনে পড়ে তাঁদের...?
    মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ই মৌলিক পড়াশোনা শুরু হয় অনন্ত বিজয়ের। তখন নানান বিষয়ে পড়াশুনো শুরু করেন। পাঠ্যপুস্তক পড়া হতো শুধু সেমিস্টার পরীক্ষার সময়। পরীক্ষা বৈতরণী পার হওয়ার জন্য সবসময়, সব কালে কিছু উদার বন্ধু থাকে। সিরিয়াস টাইপের এইসব বন্ধুদের কৃপায় নোট-টোট দিয়ে পরীক্ষা পাশ কমবেশ সবাই-ই করেছেন। অনন্তেরও সেইরকম কিছু উদার বন্ধু-বান্ধব ছিলেন। যাঁরা বাস্তবিকই অনন্তপ্রাণ ছিলেন। এর মধ্যেই মুক্তমনায় তখন নিয়ম করে পড়ার জন্য মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা, দরগাগেইট, জিন্দাবাজারে ঘন্টার পর ঘন্টা সাইবার ক্যাফেতে বসে বসে পড়তেন। কোনো কোনো দিন পাঁচ, ছয় ঘন্টাও ঠায় বসে পড়তেন। কমেন্ট করতেন। ততোদিনে 'বিজয় টাইপ' শিখে নিয়েছেন। তখন যোগাযোগ হয় অভিজিত রায়, রাফিদা আহমেদ বন্যা, জাহেদ আহমদ, ফরিদ আহমেদ, আকাশ মালিক, বিপ্লব পাল প্রমুখদের সাথে। এরপরে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয় অজয় রায়, অভিজিৎ রায় ও বন্যা আহমেদের সাথে। সেই সূত্রে সাক্ষাতও হয় বার কয়েক।
    আর এভাবেই একদিন লেখালেখির শুরুটা হয়। অনন্ত বিজয়ের ঈশ্বরকেন্দ্রিক সংশয়বাদীতার প্রশ্নে যিনি তাঁকে শুরুর দিকে সমাধান দিয়েছেন তিনি প্রবীর ঘোষ। 'আমি কেনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না' দিয়ে শুরু। তারপর একে একে প্রবীর ঘোষের 'অলৌকিক নয় লৌকিক' সিরিজ হয়ে আরজ আলী মাতুব্বর ড. আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখরা তাঁকে ঋদ্ধ করেছেন। তো সেই পর্বে আর ঠিক তিনি আটকে থাকেন নি। থিওলজিকাল বিষয়-আশয় ধারণ করেই অধ্যাপক অজয় রায়, অভিজিত রায় বন্যা আহমেদদের লেখা পড়া ও নিজের আগ্রহ ও ভালোবাসা থেকে জীব বিবর্তন নিয়ে পড়তে, ভাবতে থাকেন। ব্যক্তিগত পড়াশোনাটা তখন নিজের মতো জমিয়ে শুরু করে দিয়েছেন। প্রয়োজনে মুক্তমনার লেখাগুলোর প্রিন্ট নিয়েও পড়তেন। অন্যদেরও পড়াতেন।
    যদি ভুল না করে থাকি তবে অনন্ত বিজয়ের প্রথম লিখার হাতেখড়ি খুব সম্ভবত দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে। দুই হাজার তিন বা চার সালে। শহিদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে। যতদূর মনে পড়ে দৈনিক সংবাদে বোধহয় লেখাটি ছাপা হয়েছিলো। আমি তাঁর কাছে সেই লেখার ফটোকপি দেখেছিলাম। পত্রিকাটি বেশ যত্ন নিয়ে উপসম্পাদকীয়-মতামতাকারে ছেপেছিলো। তখন তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন মাত্র। এভাবেই লেখালেখির শুরুটা হয়েছিলো। তারপর ধারাবাহিক লিখেছেন মুক্তমনাতে। 'যুক্তি' বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের মূখপত্র, তাঁর-ই সম্পাদনা। 'যুক্তি'তে নিয়মিত লিখেছেন। দেশের আরও অন্যান্য বিজ্ঞান সাময়িকীতে লিখছেন। যদ্দুর মনে পড়ে বাংলা একাডেমির ত্রৈমাসিকের জন্যও লিখেছেন। ছেপেছিলো কি না এখন আর মনে পড়ছে না। এর মধ্যেই পার্থিব (যৌথ), ডারউইনঃএকুশ শতকের প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা, সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লবঃলিসেঙ্কো অধ্যায়, জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ (যৌথ, অনুবাদিত)। এই-ই হলো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বই। আজ অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় ছাড়া মুক্তমনা তথা বাংলা ভাষায় জৈব-বিবর্তন ও বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি প্রায় থমকে-ই আছে। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিলো না। শুরু হওয়ার আগেই সব কেমন শেষ হয়ে গেলো! থমকে গেলো।
    তখন সবে আমি অনার্সে ভর্তি হয়েছি। দুই হাজার চার সালের শেষ দিকে খবর পাই সিলেটে বিজ্ঞানপ্রিয়, যুক্তিবাদী লোকজন অনেকেই আছেন। তারা একত্র হতে চাচ্ছেন। একত্রের জন্য বিজ্ঞাপনও দিচ্ছেন। বিজ্ঞাপনে যোগাযোগের জন্য নাম্বার দিয়েছেন। খবরটা আরও এক ক্লাসমেট-বন্ধুর মাধ্যমে পেলাম। দু'জনেই একদিন হাজির হলাম। অপরজন অবশ্য আগে থেকেই লিটন দাসকে চিনতো। উপশহরের এক জায়গায় সেদিন আমরা বেশ ক'জন মিলিত হয়েছিলাম। প্রায় সবাই-ই আমরা অপরিচিত। কিন্তু চিন্তা-চেতনায় আমরা ঘনিষ্ঠ। তাই সহজ ও স্বাভাবিক হতে আমাদের বেশিক্ষণ লাগে নি। অনন্ত বিজয়, লিটন দাস, সৈকত চৌধুরী ও আমি আমরা সেদিন প্রথম প্রাণখুলে কথা বলেছিলাম। বাকিরাও। অন্যদের নাম ইচ্ছে করেই দিলাম না। পরিবর্তিত অবস্থায় অনেকেই নানান ভয়-ভীতির মধ্যে আছেন। এভাবেই একদিন বাকি সদস্যসহ সবাই মিলে আমরা ২৭ জুন, ২০০৫ সালে 'বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল' গঠন করি। শুরুর দিকে আমাদের সদস্য সংখ্যা হাতেগোনা-ই ছিলেন। হাতে গোনা সদস্যের সবাই-ই বেঁচেবর্তে আছেন। আজ নেই শুধু নেতৃত্ব দেওয়া লোকটি। বয়সী, সম-বয়সী সকলের দাদা, অনন্ত'দা!
    শহিদ মিনারে রোজ শুক্রবারে বসতাম আমরা। এরজন্য যে কতো হ্যাপা সইতে হয়েছে তা আর না বলি। বসার জন্য অনুমতিপত্রও সংগ্রহ করতে হয়েছিলো। শেষতক ঝামেলা এড়ানোর জন্য আমরা শহিদ ডা. শামসুদ্দিনের কবরের পাশে ঘাসের উপরে বসতাম। রোদ-বৃষ্টি এসব পাশ কাটিয়েই আলোচনা, বিতর্ক চলতো। সময় গড়িয়ে সন্ধ্যে হতো। অথচ আমাদের আলোচনা তখনো সমানে চলতো। অনেকেই দূর-দুরান্তের পথ পাড়ি দিয়ে আসতেন। তাঁরা জরুরি কাজ ছাড়া খুব একটা উঠার নাম নিতেন না। এই ফাঁকেফাঁকে মুড়ি, চানাচুর, পেঁয়াজু, বেগুনি ও ছোলা পত্রিকার উপরে মিশিয়ে খাওয়া-দাওয়া চলতো। সেই শহিদ মিনার, শহিদ শামসুদ্দিন কবরস্থানেও আমরা টিকতে পারিনি। তখন নগরনাটের অসীম দাসের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে ভোলানন্দ নৈশ স্কুলে আমরা জমায়েত হই। আড্ডা দেই। নগরনাট তাদের মহড়া চালোতো সেখানেই। এভাবে আসলে আর ঠিক চলছিলো না আরকি। সেই তাগিদ থেকেই মূলত আমরা সবাই একটা বসার মতো জায়গা খুঁজছিলাম। সেটা একদিন পেয়েও গেলাম। স্টেডিয়াম সংলগ্ন। রিকাবি বাজার। চার তলায়। ভাড়ার টাকা কয়েকজন সদস্য পরিমাণে বেশি দিতেন। বাদবাকি সবাই কমবেশ ভাগাভাগি করেই হতো। এতেও টান পরলে পরে অনন্ত বিজয় বাকিটা ম্যানেজ করতেন। হাসিমুখে কিভাবে জানি না সব ম্যানেজ করতে পারতেন। শুধু ম্যানেজ করতে পারেন নি ঘাতক জঙ্গিদের!
    ততোদিনে আমরা বেশ গুছিয়ে নিয়েছি। দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছি ঘটা করে। ঢাকঢোল পিটিয়েই। বিজ্ঞানবক্তা আসিফ ও তাঁর ডিসকাশন প্রজেক্ট নিয়ে আসেন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। সে সময় বৈরী আবহাওয়া ছিলো সপ্তাহ জুড়ে। অনুষ্ঠানের দিন আবহাওয়া ছিলো আরও খারাপ। সে কি ঝড়বৃষ্টি! তারপরেও প্রচার প্রচারণা থেমে ছিলো না। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সামর্থ্যের থেকেও বেশি করার চেষ্টা করে গিয়েছিলাম। ব্যানার, পোস্টার নানান স্থানে সাঁটানো থেকে চিঠিপত্র বিলি করা সবই কম সময়ের মধ্যেই দ্রুত গতিতে আমরা করে ফেলেছিলাম। সিলেটের প্রায় সব বড়, ছোটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আমরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলাম। সিলেটের ক্যাবল টিভিতে টানা দিন সাতেক বিজ্ঞাপনও হয়েছিলো। প্রেস রিলিজ সব স্থানীয়, জাতীয় পত্র-পত্রিকায় আমরা পাঠিয়েছিলাম। নিউজও হয়েছিলো। সমকালে বিজ্ঞান পাতায় নিউজটা হয়েছিলো। টিভিতে 'সারা দেশের খবরে' সংবাদও হয়েছিলো। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও সেদিন লোক সমাগম হয়েছিলো দেখার মতো। নব পর্যায়ে 'শারদা স্মৃতি হল'র দ্বিতল অবধি লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, বিজ্ঞানপ্রিয়, গুণগ্রাহী থেকে ছিলেন অনেক বিশিষ্ট জনেরা। এই প্রথম বড় বাজেটের বড় কোনো অনুষ্ঠান করি আমরা। বলা ভালো প্রথম অনুষ্ঠান হিসেবে সামান্য ভুলত্রুটি বাদে আমরা সফল হয়েছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই আমাদের প্রশংসা করেছিলেন। সে বার-ই প্রথম প্রকাশ্যে আমরা নতুন করে কমিটি ঘোষণা করি। নতুন করে জনসমক্ষে আসি। আজ সময় পরিক্রমায় সব, সবাই আছেন। নেই শুধু অনন্ত বিজয় দাশ!
    বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনোর পর অনন্ত বিজয় দাশ প্রথমে কিছু দিন একটি নিউজ এজেন্সিতে কাজ করেন। এরপর প্রায় বছর খানেক এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র‍্যাকে চাকুরি করেন। বড্ড খাটাখাট

    No religion no war, No religious justification no discrimination.Free thinking & humanism is the way forward for global peace establishment.One law for all human being.
  • 1« Previous thread | Next thread »